সাইদুর রহমান রিমন : দশম শ্রেণীর ছাত্রী নীলা রায়কে তারই ভাইয়ের রিকসা থেকে নামিয়ে নিয়ে নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাভার। বাদ-প্রতিবাদ, ঘৃণা ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। অন্যসব ঘটনার মতো নীলা রায়ের নৃশংস হত্যাকান্ডটি ঘিরেও যথারীতি পুলিশের রহস্যময় ভূমিকা সরকার বিরোধী জনমত সৃষ্টিতে সহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ের অপরাধের ঘানি সরকারের উপর চাপিয়ে চলছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ।
নৃশংস এ হত্যাকান্ডের পরও প্রধান আসামি মিজানুর রহমান এবং তার ইন্ধনদাতা কিশোর গ্যাং লিডার সাকিব ও সহযোগী জয় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরুর বাড়িতেই অবস্থান করছিল। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে র্যাব মাঠে নামে এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তারা মিজানের বাবা মাকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়। এরপর টানা চার পাঁচ দিনেও পুলিশের আর কোনো তৎপরতা দেখতে পাননি সাধারণ মানুষজন। ফলে সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বাদ-প্রতিবাদ, ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।, ছড়িয়ে পড়ে তা সর্বত্র। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশেই প্রতিবাদ মিছিল, মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে, সবাই পুলিশি নির্লিপ্ততার জন্য সরকারকে দায়ী করে ঘৃণা জানাতে থাকে।
এ অবস্থায় উর্দ্ধতন পুলিশ কমকর্তাদের নির্দেশে সাভার থানা ও ঢাকা জেলা গোয়েন্দা সদস্যরা তৎপর হয়ে উঠেন এবং এর ফলশ্রুতিতে গত শনিবার রাতেই মিজান, সাকিব ও জয়কে পুলিশ রাজফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে আটক করতে সক্ষম হয়। কিন্তু তিন হোতাকে আটকের পর পরই শুরু হয় পুলিশের আরেক নাটক। কিশোর গ্যাংয়ের মূল হোতা সাকিব সাভার পৌর আওয়ামীলীগের ধান্ধাবাজ নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরুর ছেলে বিধায় জেলা পর্যায়ের এক পুলিশ কর্মকর্তার যেন দরদ উথলে উঠে। তিনি নীলা হত্যাকান্ডে মিজানের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতাকারী সাকিব ও জয়কে বেমালুম গায়েব করে কেবলমাত্র মিজানকে মিডিয়ার সামনে হাজির করেন এবং তাকেই গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠান। অবশ্য সাভারের বিভিন্ন মহলে চাউর আছে, জেলা পর্যায়ের ওই পুলিশ কর্মকর্তা মাত্র ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে সাকিব-জয়কে রাতের আধারে ছেড়ে দিয়ে বলেছেন-এক মাসের মধ্যে যেন তাদের চেহারাটাও দেখা না যায়।
এক্ষেত্রে সাভার মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সাইফুল ইসলামের ভূমিকা ন্যাক্কারজনক বলেও মন্তব্য করছেন কেউ। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগের রাতেই মিজান, সাকিব ও জয়কে আটক করেই ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েও দেন। কিন্তু পরদিন জেলা পুলিশ সুপার থানা প্রাঙ্গনে পৌঁছানোর পর আসামি হিসেবে কেবলমাত্র মিজানকে হাজির করায় উপস্থিত মিডিয়া কর্মিরা রীতিমত হতবাক বনে যান। তাহলে বাকি দু'জন সাকিব ও জয় গেল কোথায়? সে প্রশ্নের কোনো জবাব নেই ইন্সপেক্টর সাইফুলের কাছে। মূলত: দুই আটককৃতকে লুকিয়ে ব্যক্তিগতভাবে মোটা অঙ্কের অর্থ লাভ সম্ভব হলেও পুলিশের ভাবমূর্তি ডুবানোর ক্ষেত্রে যোগ হলো আরো একধাপ।
ভয়ঙ্কর খুনের আখড়া অক্ষতই রইলো?
সাভারে আ'লীগ নেতার সিরাজুল ইসলাম সিরুর গুণধর পুত্রদের অপরাধ আখড়ায় নীলা রায়ই প্রথম হত্যাকান্ড নয়, এর আগেও সেখানে ভার্সিটি ছাত্র রিয়াদ বাবুকেও নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছে। লাগামহীন অপরাধ অপকর্মে অপ্রতিরোধ্য দুই সহোদর শাকিল-সাকিবের রুখবে সাধ্য কার। সাভার পৌর দক্ষিণ পাড়ায় নারী ঘটিত বিরোধের জের ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি প্রথম খুনের শিকার শান্তা মরিয়ম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রিয়াদ বাবু। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সেই সময় থানা পুলিশ আ’লীগ নেতার বড় ছেলে শাকিলকে গ্রেপ্তার করে। সর্বশেষ ঘটনাটি গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধায় একই ঘটনাস্থল ব্যর্থ প্রেমিক মিজানুর রহমানের হাতে প্রাণ হারায় স্কুল ছাত্রী নীলা রায়। অভিযোগের তীর এবারও সেই আঃলীগ নেতা গুনধর ছোট ছেলে কিশোর গ্যাং স্টার সাকিবের মাদকের আখড়ায়। মাস্তানি স্বভাবের সিরাজুল ইসলাম সিরু নানা অপকর্মে জড়িয়ে সাভার পৌর আঃ লীগের বিতর্কিত এক নেতার নাম। সন্ত্রাসী পুত্রদ্বয় শাকিল-সাকিব স্বল্প বয়সে অপকর্মে জড়িয়ে বাপ চাচাদের ঐতিহ্যকে বেজায় ছাপিয়ে গেছে। শুধু খুনের ঘটনাই নয় প্রতিদিন সাধারন মানুষের উপর জুলুম নির্যাতনের ঘটনা সিরু এন্ড সাভার আ’লীগের জন্য ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, এই হত্যাকান্ডের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে সিরু পুত্র কিশোর গ্যাং নেতা সাকিবের বিরুদ্ধে। আওয়ামীলীগ নেতা সিরুর গুণধর আরেক পুত্র শাকিলের বিরুদ্ধেও রয়েছে আরেকটি হত্যাকান্ডের অভিযোগ। বিগত ২০১৫ সালের ৪ শান্তা মরিয়ম ভার্সিটির ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু খুনের ঘটনায় বড় ভাই শাকিলকে সাভার থানা পুলিশ গ্রেপ্তারও করে।
আ’লীগ ক্ষমতা গ্রহনের পরই সিরুর বড় ছেলে শাকিল হোন্ডা নিয়ে স্কুল ছাত্রীদের পিঁছু নেয়। সাভার বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে সুবিধা করতে না পেরে পিছনের এলাকায় অবস্থান নেয় শাকিল। প্রায় ১০ বছর আগে গালর্স স্কুলের পিছনের এলাকায় স্কুল ফেরত মেয়েদের উত্যক্ত করতে দলবল নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠতো শাকিল। বখাটেপনা বেড়ে প্রতিনিয়ত মারামারিতে জড়িয়ে পড়া শাকিলকে নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয়ে তাকে বিয়েও করিয়ে দেন আ'লীগ নেতা। নিজেরই সহোদর ৪নং ওয়ার্ড আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক সহিদুর এর মেয়েকে ছেলের বউ করে ঘরে তুলেন। বিয়ের পর বাপ আর শ্বশুর (চাচার) শক্তিতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে শাকিল। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়া শাকিলের মাদকাসক্তি ফেরাতে ব্যর্থ শ্বশুর সহিদ নিজের মেয়ের বিচ্ছেদ নিতে বাধ্য হন। বিচ্ছেদ বিরহের একপর্যায়ে মাদকাসক্ত শাকিল ইয়াবা ব্যবসায় ঝুকে পড়লে সহোদর কিশোর গ্যাং নেতা সাকিব দলবল নিয়ে ওই আস্তানার দায়িত্ব নেয়। সর্বশেষ সাকিবের আখড়াতেই খুন হয় স্কুল ছাত্রী নীলা রায়।
No comments:
Post a Comment