সাইদুর রহমান রিমন : চাঁদাবাজি, জবরদখল, লুটপাট-দুর্নীতির পর ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা কর্মি এবার অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। মাদক সেবন, প্রকাশ্য মাতলামি, ধর্ষণ, নারী কেলেঙ্কারীসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপে অহরহ জড়িত থাকছে তারা। এতে দলীয় ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমনি স্থানীয় পর্যায়েও চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত নেতাদের মধ্যে সিংহভাগই জনপ্রতিনিধি, প্রতাপশালী। তাদের অপরাধ অপকর্মের কারণে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোও বিতর্কিত হয়ে উঠছে।
সাভার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাহাদাতের উলঙ্গ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সর্বত্র বিদঘুটে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শাহাদাত হোসেন খানের নানা অনৈতিক কার্যকলাপের সময় গোপনে ধারণকৃত নগ্ন ভিডিওগুলো মানুষের মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে। খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই ভাইরাল হওয়া এসব ভিডিওতে শাহাদাত খানকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় দেদারছে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন তরুণির সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে দেখা যায়। সে সময়ে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালাগাল, বিশ্রী বিদঘুটে অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনের পাশাপাশি বারবার বিকৃত যৌণতায় মেতে উঠছিলেন তিনি। এ দৃশ্যপট যারাই এক মুহূর্ত দেখেছেন তারাই ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদের ইয়াবা সেবনের দৃশ্য দেখে সর্বত্রই ছিঃ ছিঃ রব উঠেছে। তবু তারা চলাফেরা করে নাক উচিয়ে, বুক ফুলিয়েই। অর্থবিত্তের পাহাড় জমানো এসব নেতাদের কোনো দিকে তাকানোর ফুরসৎ নেই।
গাংনী উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমীনকে তার প্রেমিকসহ হাতেনাতে আটক করে এলাকাবাসী বিয়ে পর্যন্ত পড়িয়ে দিয়েছেন। পরকীয়া প্রেমের জেরে ২০ লাখ টাকা দেনমোহরে আবারও বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন এ নারী ভাইস চেয়ারম্যান। এক সন্তানের জননী ফারহানা ইয়াসমীন গাংনী উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক। বর মেহেরপুর সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের আনসারুল হকের ছেলে গোলাম সরোয়ার ওরফে সবুজ। গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেকের উপস্থিতিতে এ বিয়ে পড়ানো হয়। স্বামী মৃত্যুজনিত কারণে একাকী হয়ে পড়া ফারহানা ইয়াসমীন পরকীয়ার সুবিধায় সুখ-সংসার লাভ করলেও তার অনৈতিকতায় বিকর্কিত হয়েছে দল, ক্ষুন্ন হয়েছে উপজেলা পরিষদের সম্মান।
এদিকে নরসিংদীর মাধবদী পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক তার এলাকায় রীতিমত জমিদারী শাসন কায়েম করেছেন। তিনি মাস্তান বাহিনীর দ্বারা যাকে খুশি ধরে বেধে নিজের আস্তানায় নিয়ে আটকে রাখেন, নানারকম নিপিড়ন নির্যাতন চালান। মেয়র মোশাররফের কাছ থেকে বাদী-বিবাদী কারো যেন রেহাই নেই। উভয় পক্ষ থেকেই চাহিদামাফিক টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়াই তার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়র মোশাররফের হাতে দলীয় নেতা কর্মিরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হন, ক্ষতিগ্রস্ত হন। অতিসম্প্রতি থানা কৃষকলীগের সদস্য সচিব সুখরঞ্জন বনিক, থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ খান অপূর্ব, শ্রমিক লীগের থানা কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান সোহেলসহ প্রায় এক ডজন নেতা সরাসরি মেয়র মোশাররফের বর্বর নির্যাতনের শিকার হন। এসব নেতাদেরকে তিনি প্রকাশ্যে জনসম্মুখে প্রহার করেছেন, আহত বানিয়ে হাসপাতালে পর্যন্ত পাঠিয়েছেন। এ নিয়ে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগসহ ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা কর্মিদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
দলীয় নেতা কর্মিরা অভিযোগ করে জানান, মেয়রের অনৈতিক কর্মকান্ড, সন্ত্রাসী আচরণ ও লুটপাট দুর্নীতির বেশুমার অভিযোগের কারণে সাধারন মানুষের সামনে মুখ দেখানো যায় না। স্কুল কলেজের ছাত্রী থেকে শুরু করে গৃহবধূ পর্যন্ত সবাই তার ব্যাপারে ভয়ঙ্কর আতঙ্কে থাকেন। নারীঘটিত অসংখ্য কেলেঙ্কারীর সঙ্গে মেয়রের সম্পৃক্ততা নিয়ে মুখরোচক হাজারো গল্প ছড়িয়ে আছে মানুষের মুখে মুখে। তার মুখের অশ্রাব্য গালাগাল শুনলে বমির উদ্রেক হয়।
(শুধু এ কয়জন নেতা আর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই অপরাধ অপকর্মে জড়িয়ে আছে তা নয়, এ পর্যন্ত সারাদেশ থেকে অন্তত ৯৪ জন অপরাধী নেতার জঘণ্য কর্মকান্ডের বিস্তৃত ফিরিস্তি আমাদের হাতে রয়েছে। আপনার এলাকাতেও কী এমন অপরাধী নেতার অবস্থান রয়েছে? আজই ইনবক্সে তথ্য পাঠান-তাদেরকে দেশবাসীর নিকট নতুনভাবে পরিচিত করার উদ্যোগ নেয়া হবে।)
No comments:
Post a Comment