Thursday, October 1, 2020

'তারা হঠাৎ কেন বেপরোয়া ?'


 সাইদুর রহমান রিমন : চাঁদাবাজি, জবরদখল, লুটপাট-দুর্নীতির পর ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা কর্মি এবার অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েছে। মাদক সেবন, প্রকাশ্য মাতলামি, ধর্ষণ, নারী কেলেঙ্কারীসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপে অহরহ জড়িত থাকছে তারা। এতে দলীয় ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে তেমনি স্থানীয় পর্যায়েও চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।  অভিযুক্ত নেতাদের মধ্যে সিংহভাগই জনপ্রতিনিধি, প্রতাপশালী। তাদের অপরাধ অপকর্মের কারণে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোও বিতর্কিত হয়ে উঠছে।

সাভার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সাহাদাতের উলঙ্গ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সর্বত্র বিদঘুটে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শাহাদাত হোসেন খানের নানা অনৈতিক কার্যকলাপের সময় গোপনে ধারণকৃত নগ্ন ভিডিওগুলো মানুষের মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে। খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই ভাইরাল হওয়া এসব ভিডিওতে শাহাদাত খানকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় দেদারছে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন তরুণির সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে দেখা যায়। সে সময়ে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালাগাল, বিশ্রী বিদঘুটে অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনের পাশাপাশি বারবার বিকৃত যৌণতায় মেতে উঠছিলেন তিনি। এ দৃশ্যপট যারাই এক মুহূর্ত দেখেছেন তারাই ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। 

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদের ইয়াবা সেবনের দৃশ্য দেখে সর্বত্রই ছিঃ ছিঃ রব উঠেছে। তবু তারা চলাফেরা করে নাক উচিয়ে, বুক ফুলিয়েই। অর্থবিত্তের পাহাড় জমানো এসব নেতাদের কোনো দিকে তাকানোর ফুরসৎ নেই।  

গাংনী উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমীনকে তার প্রেমিকসহ হাতেনাতে আটক করে এলাকাবাসী বিয়ে পর্যন্ত পড়িয়ে দিয়েছেন। পরকীয়া প্রেমের জেরে ২০ লাখ টাকা দেনমোহরে আবারও বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন এ নারী ভাইস চেয়ারম্যান। এক সন্তানের জননী ফারহানা ইয়াসমীন গাংনী উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক। বর মেহেরপুর সদর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের আনসারুল হকের ছেলে গোলাম সরোয়ার ওরফে সবুজ। গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেকের উপস্থিতিতে এ বিয়ে পড়ানো হয়। স্বামী মৃত্যুজনিত কারণে একাকী হয়ে পড়া ফারহানা ইয়াসমীন পরকীয়ার সুবিধায় সুখ-সংসার লাভ করলেও তার অনৈতিকতায় বিকর্কিত হয়েছে দল, ক্ষুন্ন হয়েছে উপজেলা পরিষদের সম্মান। 

এদিকে নরসিংদীর মাধবদী পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক তার এলাকায় রীতিমত জমিদারী শাসন কায়েম করেছেন। তিনি মাস্তান বাহিনীর দ্বারা  যাকে খুশি ধরে বেধে নিজের আস্তানায় নিয়ে আটকে রাখেন, নানারকম নিপিড়ন নির্যাতন চালান। মেয়র মোশাররফের কাছ থেকে বাদী-বিবাদী কারো যেন রেহাই নেই। উভয় পক্ষ থেকেই চাহিদামাফিক টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়াই তার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়র মোশাররফের হাতে দলীয় নেতা কর্মিরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হন, ক্ষতিগ্রস্ত হন। অতিসম্প্রতি থানা কৃষকলীগের সদস্য সচিব সুখরঞ্জন বনিক, থানা ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ খান অপূর্ব, শ্রমিক লীগের থানা কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান সোহেলসহ প্রায় এক ডজন নেতা সরাসরি মেয়র মোশাররফের বর্বর নির্যাতনের শিকার হন। এসব নেতাদেরকে তিনি প্রকাশ্যে জনসম্মুখে প্রহার করেছেন, আহত বানিয়ে হাসপাতালে পর্যন্ত পাঠিয়েছেন। এ নিয়ে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগসহ ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা কর্মিদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।  

দলীয় নেতা কর্মিরা অভিযোগ করে জানান, মেয়রের অনৈতিক কর্মকান্ড, সন্ত্রাসী আচরণ ও লুটপাট দুর্নীতির বেশুমার অভিযোগের কারণে সাধারন মানুষের সামনে মুখ দেখানো যায় না। স্কুল কলেজের ছাত্রী থেকে শুরু করে গৃহবধূ পর্যন্ত সবাই তার ব্যাপারে ভয়ঙ্কর আতঙ্কে থাকেন। নারীঘটিত অসংখ্য কেলেঙ্কারীর সঙ্গে মেয়রের সম্পৃক্ততা নিয়ে মুখরোচক হাজারো গল্প ছড়িয়ে আছে মানুষের মুখে মুখে। তার মুখের অশ্রাব্য গালাগাল শুনলে বমির উদ্রেক হয়।  

(শুধু এ কয়জন নেতা আর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিই অপরাধ অপকর্মে জড়িয়ে আছে তা নয়, এ পর্যন্ত সারাদেশ থেকে অন্তত ৯৪ জন অপরাধী নেতার জঘণ্য কর্মকান্ডের বিস্তৃত ফিরিস্তি আমাদের হাতে রয়েছে। আপনার এলাকাতেও কী এমন অপরাধী নেতার অবস্থান রয়েছে? আজই ইনবক্সে তথ্য পাঠান-তাদেরকে দেশবাসীর নিকট নতুনভাবে পরিচিত করার উদ্যোগ নেয়া হবে।)

Monday, September 28, 2020

ছাত্রাবাসে নারীকে গণধর্ষণ: আসামি রবিউল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চেরও সভাপতি


সিলেটের ১২৮ বছরের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে তার সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউল হাসান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের এমসি কলেজ শাখারও সভাপতি। পাশাপাশি তিনি এমসি কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

এছাড়া রবিউলের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকারের ছবিও আছে। ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ধর্ষণ মামলার আসামি সবাই রণজিৎ সরকারের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী। এ ব্যাপারে জানতে রণজিৎ সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এমসি কলেজ শাখার ৪২ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন। এতে সভাপতি হিসেবে রবিউল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সোহেব মামুন নির্বাচিত হন।

এছাড়া কমিটিতে সহ-সভাপতি করা হয় ২৫ জনকে এবং যুগ্ম-সম্পাদক করা হয়েছে ১৫ জনকে, যা একটি সংগঠনের ক্ষেত্রে বিরল। একটি কলেজ শাখায় কোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনে এমন পদ-পদবি দেখা যায়নি স্বাভাবিকভাবে। ফলে এই কমিটি নিয়ে শুরু থেকেই নানা অভিযোগ ছিল।

জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে প্রাইভেটকারে এমসি কলেজে বেড়াতে যান সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার এক গৃহবধূ। ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের কর্মীরা স্বামীসহ ওই তরুণীকে তুলে নেন কলেজ ছাত্রাবাসে। পরে তারা স্বামী-স্ত্রীকে বেঁধে মারধর করেন। পরে স্বামীর সামনে গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেন তারা। খবর পেয়ে এসএমপির শাহপরান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

পরে তাকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে পুলিশ। শনিবার সকালে গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান থানায় মামলা করেন। মামলায় নয়জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ছয়জনের নাম উল্লেখ আরও দু-তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

এদিকে, শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট জেলা শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ জানিয়েছে, এমসি কলেজে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কোনো কমিটি দেয়া হয়নি। সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নাম ব্যবহার করে এমসি কলেজে বিতর্কিতদের মাধ্যমে ভুয়া কমিটি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সঙ্গে বহিষ্কৃত অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিনের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। তার দেয়া কোনো কমিটির বৈধতা নেই।

এরই মধ্যে গণধর্ষণের মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউল হাসান শনিবার বেলা ১১টার দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘সম্মানিত সচেতন নাগরিকবৃন্দ আমি রবিউল হাসান। আমি এমসি কলেজের শিক্ষার্থী। আপনারা অনেকে চেনেন, আমি কেমন মানুষ তা হয়তো অনেকে জানেন। শুক্রবার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের সঙ্গে কে বা কারা আমাকে জড়িয়ে সংবাদ করিয়েছেন জানি না। আমি এমসি কলেজের ছাত্র কিন্তু আমি হোস্টেলে কখনও ছিলাম না, আমি বাসায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আপনাদের অনুরোধ করে বলছি, এই নির্মম গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই, আমাদের পরিবার আছে। যদি আমি এই জঘন্য কাজের সঙ্গে জড়িত থাকি তাহলে প্রকাশ্যে আমাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। আমি কোনোভাবেই এই কাজের সঙ্গে জড়িত নই। সবার কাছে অনুরোধ করছি, সত্য না জেনে আমাকে এবং আমার প্রাণের সংগঠন ছাত্রলীগের নামে অপপ্রচার করবেন না। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে গণধর্ষণকারী সব নরপশুকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’

দুপুরে রবিউল হাসানের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বড় নগদীপুরে তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। দিরাই থানা পুুলিশের ওসি আশরাফুল ইসলাম অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গণধর্ষণে জড়িত রবিউলকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছি আমরা।

এছাড়া সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ ও র‍্যাবকে নির্দেশ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।

ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির আওতায় আনার জন্য সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া এবং র‍্যাব-৯ এর কমান্ডার লে. কর্নেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মিথ্যা ষড়যন্ত্রের শিকার ধর্ষিত ছেলের আর্তনাদ : মামুন


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের আলোচিত সেই ছাত্রীর স্ক্রিনশট প্রকাশ করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন মামলার প্রধান আসামী হাসান আল মামুন। বুধবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই স্ক্রিনশট প্রকাশ করেন তিনি। যেখানে মামুনকে ফাঁসানোর জন্যই ওই ছাত্রী প্রেমের অভিনয় করেছে বলে দাবি করা হয়। ভিডিওতে স্ক্রিনশট,


এ নিয়ে বিস্তারিত একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন মামুন। ‘মিথ্যা ষড়যন্ত্রের শিকার ধর্ষিত ছেলের আর্তনাদ!’ শিরোনামে দেয়া স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো।

‘‘আমি হাসান আল মামুন, যে ছেলেটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের অধিকার আদায়ে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রধান হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। এই আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছি, আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে বানানো হয়েছিল জামাত, আমাদের নামে দেওয়া হয়েছিলো শিবির ব্লেইম এবং বিএনপির তারেক রহমানের কাছ থেকে ১২৫ কোটি টাকা পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগ, যার কোনোটির সাথে আমাদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা ছিল না বলে প্রতীয়মান হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের হয়ে টানা ৩ বার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন, ২ বার আমার নেতৃত্বে আন্তঃবিভাগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরভ অর্জন করে ডিপার্টমেন্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভলিবল টিম ও মুহসীন হলের ফুটবল ও ভলিবলে টিমে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল টিমের নিয়মিত খেলোয়ার ছিলাম আমি।

এছাড়াও আমি নেত্রকোনা জেলা ফুটবলের টিমের একজন সদস্য। এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বহু সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে অনেকের সাথে আমার পরিচয় হয়। দলমত নির্বিশেষে কেউ আমার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোন অভিযোগ আনতে পারেনি। যখনই আমরা নতুন ধারার রাজনীতি করার ঘোষণা দিয়েছি এবং সারাদেশের মানুষের মাঝে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিলো, তখন আমার নামে ও সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের নামে ধর্ষণের মত গুরুতর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

তা সারাদেশের মানুষের কাছে আমাকে মিথ্যা মামলায় ধর্ষক বানানো হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর মতো এই মেয়ের সাথেও আমার পরিচয় ছিলো কিন্তু মেয়ে যে অভিযোগ করেছে তা আমাকে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে করেছে। মেয়ে নিজেই এক সময় স্বীকার করে যে সে পরিকল্পিত ভাবে আমাকে ফাঁসাতে এগুলো করেছে, নিচে একটি স্ক্রিনশট এবং তার ভিডিও দেওয়া হলো। স্ক্রিনশট সত্য মিথ্যা বলে অনেকেই মতামত দিতে পারেন, কিন্তু এই চ্যাট এখনও আমার ফোনে আছে।

প্রয়োজনে আমি আদালতের সামনে সরাসরি তা উপস্থাপন করবো। সততা- নিষ্ঠা এবং নিরপেক্ষতাই আমার জীবনে আজ কাল হয়ে দাঁড়ালো। আমি এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। আপনারা যারা আমাকে চিনেন বা জানেন, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, যদি আমি অপরাধী হয়ে থাকি তাহলে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবেন আর যদি নিরপরাধ হয়ে থাকি আমার পাশে দাঁড়াবেন। ভয়াবহ দুঃসময়ের মুখোমুখি জীবন!’’ মামুনের শেয়ার করা স্ক্রিনশটগুলো দেখতে সবাইকে অনুরোধ করে।

Sunday, September 27, 2020

যুক্তরাষ্ট্রের ৮ শহরে সতর্কতা জারি : পানিতে মস্তিষ্ক-খেকো অ্যামিবার আতঙ্গ!


 যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের সাপ্লাইয়ের পানিতে এক প্রকার বিরল অ্যামিবার সন্ধান পাওয়ার পর আটটি শহরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এককোষী মুক্তজীবী এই প্রাণীটি মানুষের শরীরে ঢুকতে পারলে মস্তিষ্ক ধ্বংস করে দেয়।

এর আগে পাকিস্তানে ‘নাইজেলরিয়া ফ্লাওয়ারি’ নামের এই অ্যামিবার সন্ধান পাওয়া যায়। ২০১২ সালে দেশটিতে এর কারণে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। এটি সাধারণত সাঁতারের সময় নাক দিয়ে প্রবেশ করে। ‘নাইজেলরিয়া ফ্লাওয়ারি’কে বিজ্ঞানীরা ‘মগজ-খেকো’ অ্যামিবাও বলে থাকেন।

দ্য টেক্সাস কমিশন অন এনভায়রনমেন্টাল কোয়ালিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবাইকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পানিতে অ্যামিবা পাওয়া গেছে, যা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।’

সিএনএন বলছে, ‘নাইজেলরিয়া ফ্লাওয়ারি’ পানির মাধ্যমে ছড়ায়। মস্তিষ্কে ঢুকে স্নায়ু ধ্বংস করে ফেলে। নদী, পুকুর, হ্রদ ও ঝরনার পানি যেখানে উষ্ণ, সেখানে এ ধরনের অ্যামিবা বাস করে। এ ছাড়া শিল্পকারখানার উষ্ণ পানি পড়ে এমন মাটি ও সুইমিংপুলেও এ ধরনের অ্যামিবার দেখা মেলে। টেক্সাসের পানিতে অ্যামিবার সন্ধান পাওয়ার পর সেখানকার লেক জ্যাকশন, ফ্রিপোর্ট, এনগ্লিটন, ব্রাজোরিয়া, রিচউড, ওস্টার ক্রেক, ক্লুট, রোজেনবার্গ শহরে এরইমধ্যে জারি করা হয়েছে সতর্কতা।

এ অ্যামিবা মস্তিষ্কে ঢুকে পড়লে মারাত্মক কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণ থাকে হালকা মাথাব্যথা, ঘাড়ব্যথা, জ্বর ও পেটব্যথা। ফ্লোরিডার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে অ্যামিবায় এখন পর্যন্ত ১৪৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। এরমধ্যে মাত্র চার জন বাঁচতে পেরেছেন!

১৯৬২ সাল থেকে ফ্লোরিডায় অ্যামিবার ৩৭টি ঘটনার কথা শোনা গেছে। মারাত্মক ক্ষতিকর এই অ্যামিবা থেকে দূরে থাকতে সাঁতারের সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। নাক দিয়ে যেন কোনোভাবে পানি প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
(সুত্রঃ বাংলাট্রিবিউন)



সাভারে নীলা হত্যাকান্ড : দশ লাখের ছাড়া পেলো সাকিব-জয়? কিশোর গ্যাংয়ের আখড়া অক্ষত!


সাইদুর রহমান রিমন : দশম শ্রেণীর ছাত্রী নীলা রায়কে তারই ভাইয়ের রিকসা থেকে নামিয়ে নিয়ে নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাভার। বাদ-প্রতিবাদ, ঘৃণা ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। অন্যসব ঘটনার মতো নীলা রায়ের নৃশংস হত্যাকান্ডটি ঘিরেও যথারীতি পুলিশের রহস্যময় ভূমিকা সরকার বিরোধী জনমত সৃষ্টিতে সহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ের অপরাধের ঘানি সরকারের উপর চাপিয়ে চলছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ।  

নৃশংস এ হত্যাকান্ডের পরও প্রধান আসামি মিজানুর রহমান এবং তার ইন্ধনদাতা কিশোর গ্যাং লিডার সাকিব ও সহযোগী জয় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরুর বাড়িতেই অবস্থান করছিল। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে র্যাব মাঠে নামে এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তারা মিজানের বাবা মাকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়।  এরপর টানা চার পাঁচ দিনেও পুলিশের আর কোনো তৎপরতা দেখতে পাননি সাধারণ মানুষজন।  ফলে সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বাদ-প্রতিবাদ, ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।, ছড়িয়ে পড়ে তা সর্বত্র। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশেই প্রতিবাদ মিছিল, মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে, সবাই পুলিশি নির্লিপ্ততার জন্য সরকারকে দায়ী করে ঘৃণা জানাতে থাকে।  

এ অবস্থায় উর্দ্ধতন পুলিশ কমকর্তাদের নির্দেশে সাভার থানা ও ঢাকা জেলা গোয়েন্দা সদস্যরা তৎপর হয়ে উঠেন এবং এর ফলশ্রুতিতে গত শনিবার রাতেই মিজান, সাকিব ও জয়কে পুলিশ রাজফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে আটক করতে সক্ষম হয়। কিন্তু তিন হোতাকে আটকের পর পরই শুরু হয় পুলিশের আরেক নাটক।  কিশোর গ্যাংয়ের মূল হোতা সাকিব সাভার পৌর আওয়ামীলীগের ধান্ধাবাজ নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরুর ছেলে বিধায় জেলা পর্যায়ের এক পুলিশ কর্মকর্তার যেন দরদ উথলে উঠে। তিনি নীলা হত্যাকান্ডে মিজানের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতাকারী সাকিব ও জয়কে বেমালুম গায়েব করে কেবলমাত্র মিজানকে মিডিয়ার সামনে হাজির করেন এবং তাকেই গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠান। অবশ্য সাভারের বিভিন্ন মহলে চাউর আছে, জেলা পর্যায়ের ওই পুলিশ কর্মকর্তা মাত্র ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে সাকিব-জয়কে রাতের আধারে ছেড়ে দিয়ে বলেছেন-এক মাসের মধ্যে যেন তাদের চেহারাটাও দেখা না যায়।  

এক্ষেত্রে সাভার মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সাইফুল ইসলামের ভূমিকা ন্যাক্কারজনক বলেও মন্তব্য করছেন কেউ।  সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগের রাতেই মিজান, সাকিব ও জয়কে আটক করেই ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েও দেন।  কিন্তু পরদিন জেলা পুলিশ সুপার থানা প্রাঙ্গনে পৌঁছানোর পর আসামি হিসেবে কেবলমাত্র মিজানকে হাজির করায় উপস্থিত মিডিয়া কর্মিরা রীতিমত হতবাক বনে যান।  তাহলে বাকি দু'জন সাকিব ও জয় গেল কোথায়? সে প্রশ্নের কোনো জবাব নেই ইন্সপেক্টর সাইফুলের কাছে।  মূলত: দুই আটককৃতকে লুকিয়ে ব্যক্তিগতভাবে মোটা অঙ্কের অর্থ লাভ সম্ভব হলেও পুলিশের ভাবমূর্তি ডুবানোর ক্ষেত্রে যোগ হলো আরো একধাপ।    


ভয়ঙ্কর খুনের আখড়া অক্ষতই রইলো? 

সাভারে আ'লীগ নেতার সিরাজুল ইসলাম সিরুর গুণধর পুত্রদের অপরাধ আখড়ায় নীলা রায়ই প্রথম হত্যাকান্ড নয়, এর আগেও সেখানে ভার্সিটি ছাত্র রিয়াদ বাবুকেও নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছে। লাগামহীন অপরাধ অপকর্মে অপ্রতিরোধ্য দুই সহোদর শাকিল-সাকিবের রুখবে সাধ্য কার।  সাভার পৌর দক্ষিণ পাড়ায় নারী ঘটিত বিরোধের জের  ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি  প্রথম খুনের শিকার শান্তা মরিয়ম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রিয়াদ বাবু।  হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সেই সময় থানা পুলিশ আ’লীগ নেতার বড় ছেলে শাকিলকে গ্রেপ্তার করে। সর্বশেষ ঘটনাটি গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধায় একই ঘটনাস্থল ব্যর্থ প্রেমিক মিজানুর রহমানের হাতে প্রাণ হারায় স্কুল ছাত্রী নীলা রায়। অভিযোগের তীর এবারও  সেই আঃলীগ নেতা গুনধর ছোট ছেলে কিশোর গ্যাং স্টার সাকিবের মাদকের আখড়ায়।  মাস্তানি স্বভাবের সিরাজুল  ইসলাম সিরু  নানা অপকর্মে জড়িয়ে সাভার পৌর আঃ লীগের বিতর্কিত এক নেতার নাম।  সন্ত্রাসী পুত্রদ্বয় শাকিল-সাকিব স্বল্প বয়সে অপকর্মে জড়িয়ে বাপ চাচাদের ঐতিহ্যকে বেজায় ছাপিয়ে গেছে।  শুধু খুনের ঘটনাই নয় প্রতিদিন সাধারন মানুষের উপর জুলুম নির্যাতনের ঘটনা  সিরু এন্ড সাভার আ’লীগের জন্য ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, এই হত্যাকান্ডের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে সিরু পুত্র কিশোর গ্যাং নেতা সাকিবের বিরুদ্ধে। আওয়ামীলীগ নেতা সিরুর গুণধর আরেক পুত্র শাকিলের বিরুদ্ধেও রয়েছে আরেকটি হত্যাকান্ডের অভিযোগ। বিগত ২০১৫ সালের ৪ শান্তা মরিয়ম ভার্সিটির ছাত্র রিয়াদ মোর্শেদ বাবু খুনের ঘটনায় বড় ভাই শাকিলকে সাভার থানা পুলিশ গ্রেপ্তারও করে।  

আ’লীগ ক্ষমতা গ্রহনের পরই সিরুর বড় ছেলে শাকিল হোন্ডা নিয়ে স্কুল ছাত্রীদের পিঁছু নেয়।  সাভার বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে সুবিধা করতে না পেরে পিছনের এলাকায়  অবস্থান নেয় শাকিল।  প্রায় ১০ বছর আগে গালর্স স্কুলের পিছনের এলাকায় স্কুল ফেরত মেয়েদের উত্যক্ত করতে দলবল নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠতো শাকিল। বখাটেপনা বেড়ে প্রতিনিয়ত মারামারিতে জড়িয়ে পড়া শাকিলকে নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয়ে তাকে বিয়েও করিয়ে দেন আ'লীগ নেতা। নিজেরই সহোদর  ৪নং ওয়ার্ড আ’লীগ  সাধারণ সম্পাদক সহিদুর এর মেয়েকে ছেলের বউ করে ঘরে তুলেন। বিয়ের পর বাপ আর শ্বশুর (চাচার) শক্তিতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে শাকিল। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়া শাকিলের মাদকাসক্তি ফেরাতে ব্যর্থ শ্বশুর সহিদ নিজের মেয়ের বিচ্ছেদ নিতে বাধ্য হন। বিচ্ছেদ বিরহের একপর্যায়ে মাদকাসক্ত শাকিল ইয়াবা ব্যবসায় ঝুকে পড়লে সহোদর কিশোর গ্যাং নেতা সাকিব দলবল নিয়ে ওই আস্তানার দায়িত্ব নেয়। সর্বশেষ সাকিবের আখড়াতেই খুন হয় স্কুল ছাত্রী নীলা রায়।

Monday, September 21, 2020

পটসড্যাম জায়ান্টস: লম্বা মানুষদের নিয়ে গঠিত এক বিশেষ সেনাদল


প্রথম ফ্রেডেরিক উইলিয়াম প্রায় ২৭ বছর ধরে প্রুশিয়ার রাজার দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় সেনাবাহিনীতে সৈন্যসংখ্যা তিনি ৩৮ হাজার থেকে প্রায় ৮৩ হাজারে উন্নীত করেন, যার ফলে তিনি ‘সোলজার কিং’ হিসেবেও খ্যাতি পান। তবে, উইলিয়ামের ব্যক্তিগত এক বিশেষ সেনাদল ছিল, যাতে ভর্তি করা হতো কেবলমাত্র আকৃতিতে লম্বা মানুষদেরই। বিশেষ এই সেনাদল নিয়ে কিছু বলতেই এই লেখা।

রাজা উইলিয়ামের বিশেষ এই সেনাদলের অফিসিয়াল নাম ছিল ‘দ্য গ্র্যান্ড গ্রেনেডিয়ার্স অফ পটসড্যাম’। তবে মানুষের অত কঠিন নামে ডাকতে বয়েই গিয়েছিল। তারা একে ডাকত ‘দ্য পটসড্যাম জায়ান্টস’ নাম ধরে। তো, এই জায়ান্ট তথা দানবদের (আসলে তো মানুষ!) কতটা লম্বা হওয়া লাগত? ৬ ফুটের বেশি লম্বা হলে যে কেউ উইলিয়ামের এই বিশেষ সেনাদলে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারত। এছাড়া আর কোনো যোগ্যতা বা দক্ষতার প্রমাণেরই দরকার ছিল না।

প্রথম ফ্রেডেরিক উইলিয়াম; Image source: Wikimedia Commons

ইতিহাস বলে, এই দানবেরা সেনাবাহিনীতে বেশ আরাম-আয়েশেই দিন কাটাত। পুষ্টিকর খাবার, আরামদায়ক বাসস্থান, ভাল বেতন, রাজার সুদৃষ্টি- সবই ছিল তাদের জন্য বরাদ্দ। চমৎকার এক নীলরঙা ইউনিফর্ম দেয়া হত তাদের, সাথে মাথার উপর থাকত ৪৫ সেন্টিমিটার লম্বা টুপি, যার ফলে এমনিতেই লম্বা এই মানুষগুলোকে আরও লম্বা দেখাত। সৈন্যদের বেতন নির্ভর করত তাদের উচ্চতার উপর। যে যত লম্বা, তার বেতন তত বেশি।

এটুকু পড়ে যদি আপনার মনে হয়, পটসড্যামের এই দানবেরা বেশ সুখেই ছিল, তবে আপনি ভুল ভাবছেন। আসলে, এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত সৈন্যদের এক বিরাট অংশ এই জীবনে আসতেই চায়নি। তাদেরকে কখনও জোর করে পাঠিয়ে দেয়া হতো, কখনও আবার অপহরণ করেও নিয়ে আসা হতো! সেই সাথে রাজার বিচিত্র সব আদেশ পালনের বিষয়টি তো ছিলই।

অতিরিক্ত লম্বা কোনো ছেলে যদি রাজার কোনো লোকের নজরে পড়ত, তাহলে তার বাবাকে অর্থ দিয়ে তিনি ছেলেটিকে নিয়ে আসতেন। যদি কোনো জমিদারের অধীনস্থ কোনো প্রজাও বেশি লম্বা হতো, তাহলে জমিদারকে অর্থ দিয়ে সেই প্রজাকে ধরে আনা হতো। এমনকি, বাবা-মায়ের উচ্চতা বেশি হিসেব করে কোনো সন্তান ভবিষ্যতে বেশি লম্বা হতে পারে, এমন ধারণা হলে সেই নবজাতক সন্তানের কপালেও উজ্জ্বল লাল রঙের শনাক্তকরণ চিহ্ন দিয়ে আসা হতো। আশেপাশের রাজ্যের রাজারাও উইলিয়ামের বিচিত্র খেয়াল সম্পর্কে জানতেন। ফলে তারাও মাঝে মাঝেই নিজেদের রাজ্যের লম্বা প্রজাদেরকে একপ্রকার জোর করেই উইলিয়ামের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। কেন? সম্পর্ক ভাল রাখার জন্য!

Image source: mysteriousuniverse.org


রাজা কিংবা তার অনুচরেরা কাউকে বিশেষ এই বাহিনীর জন্য পছন্দ করলে তার আসলে এই বাহিনীতে যুক্ত না হয়ে কোনো উপায় ছিল না, সেটা স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। অনিচ্ছায় হলে সেই লোকটিকে অপহরণ করে এখানে নিয়ে আসা হতো। একবার তো এক অস্ট্রিয়ান কূটনীতিবিদকে রাজার এতটাই মনে ধরে যায় যে তাকেও এই বাহিনীতে যুক্ত করার জন্য অপহরণের ব্যবস্থা করেন তিনি।

পটসড্যামের দানবদের মাঝে বিখ্যাত একজন হলেন জেমস কার্কল্যান্ড। ৭ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা এই আইরিশকে পেতেও বেশ জলঘোলা করেন রাজা। লন্ডনে নিযুক্ত প্রুশিয়ান রাষ্ট্রদূত ব্যারন বর্কের জন্য পাইক হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু এটা ছিল আসলে এক প্রতারণা, যাতে করে শিকার ফাঁদে এসে ধরা দেয়। জেমস চাকরিতে যোগ দিতে আসলে তাকে পোর্টসমাউথ বন্দরে নোঙর করে রাখা প্রুশিয়ান জাহাজে কাজের নাম করে পাঠানো হয়।

জেমস সরলমনেই সেদিকে রওয়ানা দিল। ওদিকে পোর্টসমাউথ বন্দরে আগে থেকেই তার জন্য অপেক্ষা করে ছিল রাজার লোকজন। সে উপস্থিত হওয়ামাত্রই হাত-পা-মুখ বেঁধে জাহাজে তুলে ফেলা হয়। এরপর জাহাজটি রওয়ানা দেয় প্রুশিয়ার উদ্দেশ্যে!


মিশন সাক্সেসফুল!

অপহরণ করে আনা যদি হয় একপ্রকার নির্যাতন, তাহলে সেটাকে বলতে হবে নির্যাতনের কেবলমাত্র প্রথম ধাপ। এরপর থেকে রাজার মনোরঞ্জনের জন্য বিভিন্ন সময়ই বিভিন্ন কিছু করতে হতো তাদের।

যেমন, যদি রাজা অসুস্থ হয়ে পড়তেন, তাহলে মন ভাল করার জন্য এই সৈন্যদেরকে তাদের রুম দিয়ে মার্চ করে যেতে হত। এতে তিনি মানসিক শান্তি লাভ করতেন। যদি রাজার মন খারাপ থাকত, তাহলে তিনি দু-তিনশ দানবকে ডেকে কসরতের ব্যবস্থা করতেন মন ভাল করার জন্য। কখনও আবার অবসর সময়ে তিনি রংতুলি আর ক্যানভাস নিয়ে বসে পড়তেন। যে সৈন্যকে তার ভাল লেগে যেত, এবং অবশ্যই যার চেহারা তার ঠিকমতো মনে থাকতো, তার ছবিই আঁকতে শুরু করতেন রাজা!

Image source: mysteriousuniverse.org


শুধু কি এটুকুই? রাজা উইলিয়াম একেবার প্রজনন পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন। তিনি চাইতেন, ইউরোপের সবচেয়ে লম্বা সেনাদের বাহিনীটা হোক কেবলমাত্র তারই। ফলে লম্বা লম্বা নারীদের এনে তার এই লম্বা সেনাদের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করতেন তিনি, চাইতেন তাদের মিলনের ফলে নতুন যে সন্তানরা আসবে, তারাও যেন তাদের বাবা-মায়ের মতোই অতিরিক্ত লম্বা হয়। বলা বাহুল্য, রাজার এই প্রচেষ্টা সফলও হয়েছিল। আঠারো শতকের শেষের দিকে পটসড্যামে অস্বাভাবিক লম্বা মানুষজন একটু বেশিই চোখে পড়ত।

এখানেই কি শেষ রাজার উন্মাদনা? না। রাজার নির্দেশে এক যন্ত্র বানানো হয়েছিল যেটায় এই লম্বা সেনাদের টানা হতো, যাতে তারা আরও লম্বা হতে পারে! কখনও কখনও রাজা নিজে এসেই এই কাজের উদ্বোধন করতেন আর দুপুরের খাবার খেতে খেতে সৈন্যদের উপর চলা এই অমানবিক কাজটি উপভোগ করতেন। তবে নিশ্চিতভাবেই এটা উচ্চতা নিয়ে বাড়াবাড়িই ছিল বলতে হবে। ফলে অনেক সময়েই এর মধ্য দিয়ে যাওয়া আহত সৈন্যরা মৃত্যুবরণও করত। একসময় রাজা নিজের ভুল বুঝতে পেরে অবশ্য এই যন্ত্রের ব্যবহার থেকে সরে আসেন। এত নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কেউ যদি সেনাবাহিনী থেকে পালাতে চাইত, তবে তার একমাত্র শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড।

এত ঝামেলা করে সংগ্রহ করা হতো যে সেনাদের, আদর-যত্ন-বেতন দেয়া হতো যাদের, তারা কী কী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের কী কী স্বাক্ষর রেখেছিল জানতে চান? তারা আসলে কোনো যুদ্ধেই অংশ নেয়নি। আসলে ‘নেয়নি’ না বলে তাদের ‘নিতে দেয়া হয়নি’ বলাটাই ভাল, কেননা রাজা উইলিয়াম মনে করতেন, এরা এতটাই মূল্যবান যে কোনো যুদ্ধেই তাদের পাঠানো উচিত হবে না। ফলে প্যারেড গ্রাউন্ডে করা সামরিক নানা প্রশিক্ষণই ছিল তাদের একমাত্র কাজ।

১৭৪০ সালে মারা যান রাজা প্রথম ফ্রেডেরিক উইলিয়াম। ততদিনে তার বিশেষ এই সেনাবাহিনীর সৈন্যসংখ্যা আড়াই হাজারে গিয়ে ঠেকেছিল। তার ছেলে ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট অবশ্য বাবার এই খামখেয়ালীপনাকে ভালভাবে নেয়নি। এই সেনাদের পেছনে এত খরচ তার কাছে অপচয় ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি। ফলে বাবার মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসে তিনি এই সেনাদের বিভিন্ন অ্যাক্টিভ কম্ব্যাট ইউনিটে স্থানান্তরিত করতে থাকেন।

অবশেষে ১৮০৬ সালে এসে পুরোপুরিভাবেই বিলুপ্ত হয়ে যায় অতিরিক্ত লম্বা মানুষদের নিয়ে গঠিত রাজা উইলিয়ামের স্বপ্নের সেই ইউনিটটি।





Sunday, September 20, 2020

ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ



সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যা মামলার আসামি ও টেকনাফ থানার সাবেক (বরখাস্ত) ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের প্রায় ৪ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ নিয়েছে আদালত। রবিবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুল আলম মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে এই আদেশ দিয়েছেন।

গত ২৩ আগস্ট দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলা দায়ের করেন। এসব অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ওসি প্রদীপ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। আর ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রদীপের উপস্থিতিতে শুনানির পর এই মামলায় প্রদীপকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগন দায়রা জজ শেখ আশফাকুল আলম। এরপর রবিবার দুদক অবৈধভাবে অর্জিত তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের জন্য আদালতে আবেদন করেন। একই দিন প্রদীপের পক্ষে জামিন, স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও কারাগারে তার সাথে আইনজীবীর সাক্ষাতের বিষয়ে ৩টি পৃথক আবেদনের উপর আদালতে শুনানি হয়েছে।

দুদকের আইনজীবী মাহামুদুল হক ইত্তেফাককে বলেন, আদালত প্রদীপের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তার ও স্ত্রী স্থাবর ও অস্থাবর ৪ কোটি ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯ টাকার অবৈধ সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কারাগারে তার আইনজীবীর সাক্ষাতের বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’

ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটায় ২ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ টাকা দামের ৬ তলা একটি বাড়ি। নগরীর পাঁচ থানার পশ্চিম ষোলশহর এলাকায় ১ কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৬০০ টাকা দামের জমির উপর ৭ লাখ টাকা দামের সেমিপাকা ঘর। কক্সবাজারের ঝিলংঝা মৌজায় ১২ লাখ ৫ হাজার ১৭৫ টাকার একটি ফ্ল্যাট।

২০১৮ লালে ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল তাদের দুইজনকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেন দুদক। ১২ মে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় -২ তারা পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।

খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশে যাবেন এক হাজার সরকারি কর্মকর্তা!


বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বিদেশে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নতুন কিছু নয়। তবে মাঝেমধ্যেই ভিন্নধর্মী কিছু কারণে তাদের বিদেশ যাওয়ার উদ্যোগ আলোচনায় আসে। এবার সরকারি অন্তত এক হাজার কর্মকর্তাকে খিচুড়ি রান্না শিখতে বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ ফের আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা।

জানা গেছে, এক হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে খিচুড়ি রান্না শিখতে বা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। পরিকল্পনা কমিশন থেকে এর অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করছে অধিদপ্তর। স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণের জন্য তাদেরকে বিদেশ পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জনগণের টাকা খরচ করে এ ধরনের সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। খবরে ডিপিই ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, সফরে গিয়ে কর্মকর্তারা এ ধরনের প্রকল্পের জন্য বাজার থেকে কীভাবে দ্রব্যাদি ক্রয় করা হয়, খিচুড়ি রান্নার নিয়ম এবং তা বিতরণের উপায় সম্পর্কে ধারণা নেবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ডিপিই, পরিকল্পনা কমিশন এবং বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের কর্মকর্তারা পাঁচ বছরের মধ্যে এই সফরের সুযোগ পাবেন।

ওই প্রকল্পের পরিচালক এবং ডিপিই কর্মকর্তা রুহুল আমিন খান বলেন, পাঁচ বছরে এক হাজার কর্মকর্তাকে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কীভাবে খিচুড়ি রান্না করতে হয় এবং তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয় সে বিষয়ে তারা ধারণা নিতে পারবেন। এ কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে। এজন্য বিদেশি প্রশিক্ষণ প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, ডিপিই প্রাথমিকভাবে বিদেশ যাত্রার জন্য পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছে। এছাড়া দেশেই প্রশিক্ষণের জন্য আরও ১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এই রান্না করা খাবার বিতরণ কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা। এর আওতায় পাঁচ বছর ধরে প্রায় এক কোটি ৪৮ লাখ শিক্ষার্থীকে পুষ্টিকর বিস্কুট ও রান্না করা খিচুড়ি দেওয়া হবে। ৫০৯টি উপজেলার শিক্ষার্থীরা এ খাবার পাবে।

তবে পরিকল্পনা কমিশন এই প্রকল্প থেকে বিদেশ যাত্রা বাতিল করার কথা বলেছে। এছাড়া দেশেও এ ধরনের প্রশিক্ষণের বিষয়ে যৌক্তিকতা কি জানতে চেয়েছে। কমিশন জানিয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ধরনের খাবার বিতরণ নতুন নয়। ডিপিই দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

তবে এ বিষয়ে রুহুল আমিন খান বলেন, গত বছরের ভারতের কয়েকটি স্কুল তারা পরিদর্শন করেন এবং সেখানে কীভাবে খাবার রান্না হয় সে বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছেন। আরও কর্মকর্তাকে এ ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দিতে চান বলে তিনি জানিয়েছেন। অবশ্য আগামীতে কোন দেশ তারা ভ্রমণ করবেন সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রকল্প পাস হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের আরও কিছু অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিত করেছে। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পে সামাজিক সংহতির জন্য সাড়ে সাত কোটি ও পরামর্শকের জন্য ছয় কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া আট লাখ টাকা দিয়ে একটি এসি ও দুই কোটি টাকা দিয়ে ফার্নিচার ক্রয়ের বিষয়েও আপত্তি তুলেছে। মিটিং, সেমিনার ও ওয়ার্কশপের জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছে ডিপিই।

ওই প্রকল্পের আওতায় ১৭ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা খাবার ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া খাবার সরবরাহের জন্য ১৭ কোটি এবং প্লেট কেনার জন্য ১১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। এই ব্যয় মূল্যায়ন ছাড়াই কমানো সম্ভব বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের আওতায় এসইউভি ও ছয়টি মাইক্রোবাস কিনতে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয় করেত চায় ডিপিই। এছাড়া গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেড় কোটি, জ্বালানি তেল ও লুব্রিকেন্টের জন্য ৬০ লাখ এবং যাতায়াতের জন্য ২০ লাখ টাকা চেয়েছে। পরিবহন সংক্রান্ত এই ব্যয়েরও যৌক্তিক ব্যাখ্যা চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এর পাশাপাশি পরিদর্শন ও মূল্যায়নের জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা চেয়েছে ডিপিই।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ভ্রমণের কোনো যৌক্তিকতা নেই। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন সব ধরনের বিদেশ সফর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সবকিছু খতিয়ে দেখে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় এখন ১০৪ উপজেলার দরিদ্রপীড়িত এলাকায় উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ ৭৫ গ্রাম ওজনের বিস্কুট, বিতরণ করা হচ্ছে। ২০১০ সালে ৫০ কোটি টাকার ওই প্রকল্প চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। এছাড়া ২০১৯ সালের সিদ্ধান্তের আলোক প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থীকে ডিম খিচুড়ি দেওয়া হচ্ছে।

Wednesday, September 9, 2020

হেতে লোপা তালুকদার!?


 লোপা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় পরিচিত মুখ। লোপা ফেসবুকেও সক্রিয়। তার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে, তার পরিচয়ের বহর। তার ফেসবুকে প্রফাইলে গিয়ে দেখা গেছে তিনি অগ্নি টিভির ম্যানেজিং ডিরেক্টর, আওয়ামী পেশাজীবী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র রিপোর্টার নবচেতনা, সিনিয়র রিপোর্টার, সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার মোহনা টিভি, ডিরেক্টর শীর্ষ টিভি, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, সাপ্তাহিক শীর্ষ সমাচার, বাংলাদেশ কবি পরিষদের কবি।

লোপা তালুকদারকে নিয়ে সম্প্রতি সাবরিনা আরেফীন নামের একজন ফেইসবুক ইউজার একটা স্টাটাস দিয়েছেন। নিচে স্টাটাসটি হুবহু তুলে দেওয়া হোল:-

আওয়ামী পেশাজীবী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়ে উঠা একটি পথ শিশু অপহৃত হয়। মেয়েটির নাম জিনিয়া। সে টিএসসি এলাকায় ফুল বিক্রি করতো। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক অনেকেই মেয়েটিকে চিনতেন, স্নেহ করতেন- সেজন্য বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং প্রশাসনের টনক নড়ে। কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। শেষ পর্যন্ত এক ঘৃনিত আওয়ামী নারী পাচারকারী লোপা'র কবল থেকে উদ্ধার করা হয় শিশুটিকে। পুলিশ জানিয়েছে, লোপা পথ শিশুদের পাচার করতেন। তার বিরুদ্ধে নানাবিধ অপকর্ম ও খুনের মামলাও রয়েছে!!

অথচ এমন একজন ঘৃনিত খুনি ও শিশু পাচারকারীর সাথে জ্বলজ্বল করছে এই রাষ্ট্রের সব দণ্ড মুন্ডের কর্তাদের ছবি।

এগুলা কি ভাবা যায় ! দেখে শুনে মনে হয়,
আওয়ামীলীগ এখন আর কোনভাবেই গনমানুষের দল নেই। দলটি এখন এইসব লোপা, পাপিয়া, বদি, পাপলু, সাব্রিনাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
আল্লাহ জানে এইরকম কত শত লোপা এখন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে।
অবশেষে লোম বাঁছতে গিয়ে আওয়ামীলীগ উজাড় না হয়ে যায়।



Friday, August 28, 2020

কার স্বার্থে বহাল এসপি?




একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে সিনহা হত্যার তদন্ত!!

সাইদুর রহমান রিমন:
এসপি মাসুদের নানা কৌশলী খবরদারিত্বে মেজর সিনহা হত্যার তদন্ত কী একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে? র্যাব কর্মকর্তাদের ছোটাছুটি, অক্লান্ত পরিশ্রম, গোয়েন্দা ইউনিটের অব্যাহত তথ্য সহায়তা সত্তেও তদন্ত ক্ষেত্রে দৃশ্যমান সাফল্য দেখতে পাচ্ছেন না দেশবাসী। ‌'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে' শব্দের মধ্যেই র্যাবের প্রেসব্রিফিং সীমাবদ্ধ থাকায় হতাশ হয়ে পড়ছেন মামলা সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে হত্যাকান্ডের ২৮ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার প্রধান সাক্ষী সিফাতের বক্তব্য রেকর্ড করতে পারেননি র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা। অথচ তার বক্তব্য ছাড়াই আসামিদের দুই দফা রিমান্ড শেষ হয়েছে, তৃতীয় দফায় আরো তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে প্রদীপ-লিয়াকত-নন্দ দুলালকে। ফলে 'হত্যাকান্ড হয়েছে' এইমর্মে যাবতীয় তথ্য প্রমাণ জোগাড় করা গেছে কিন্তু 'কেন এ হত্যাকান্ড' সেই মোটিভ সম্পর্কে এখনো তদন্ত কর্মকর্তারা অন্ধকারে। 

র্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা সরাসরি স্বীকার না করলেও একাধিক সূত্রে জানা যায়, তদন্ত কর্মকান্ডের সকল পয়েন্টে কক্সবাজারের অভিযুক্ত পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদের নগ্ন হস্তক্ষেপ দেখতে পাচ্ছেন। তার বাড়তি প্রভাব আর নানা কৌশলী ভূমিকার কারণে পদে পদে বাধাগ্রস্তও হচ্ছে তদন্ত। ঘটনার দিন ওসি প্রদীপের সঙ্গি হয়ে আর কারা কারা উর্দ্ধশ্বাসে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছেছিলেন তাদের তালিকাটা পর্যন্ত র্যাব কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তরে নানারকম গড়িমসি করা হচ্ছে। আবার ভিন্নসূত্রে তালিকা সংগ্রহ করা গেলেও তাদেরকে খুঁজে টেকনাফ থানায় পাওয়া যাচ্ছে না। কৌশলী এসপি এরইমধ্যে ঘটনাস্থলে যাওয়া দুই সাব ইন্সপেক্টর ও এক কনস্টেবলকে তাৎক্ষণিক ভাবে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। 
তদন্ত কাজে সার্বক্ষণিক সহায়তাকারী এক র্যাব কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, টেকনাফ থানার সিসিটিভি ফুটেজ ও হার্ডড্রাইভ গায়েব হওয়াটাই সিনহা হত্যার মূল মোটিভ উদঘাটনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি জানা সত্তেও এসপি যথাযথ ব্যবস্থা নেননি। বরং তদন্ত কাজের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করছে। তবে প্রদীপের স্বার্থ সুরক্ষার মিশন নিয়ে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া ওসি ফয়সলকে ইতিমধ্যেই টেকনাফ থানার চেয়ার ছাড়া করা হয়েছে। তাকে এপিবিএন এ যোগদানে বাধ্য করা হয়েছে। 


ডাকাত হাকিমের হাতে ওসি প্রদীপের টাকা!

এবার রোহিঙ্গা ডাকাত হাকিমের হাত ঘুরেই ওসি প্রদীপের কয়েক কোটি টাকা দুবাইতে পাচার হয়ে গেল। গত ৭২ ঘন্টা সময়ের মধ্যেই ইয়াবা ডন ফয়সাল, সোহেল, রফিক ও জাফর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পাচার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 
সীমান্তের চোরাচালানী সিন্ডিকেট টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে ম্যানেজ করে এবং রোহিঙ্গা ডাকাত হাকিমের সহযোগিতায় মিয়ানমার থেকে মরণনেশা ইয়াবার বড় বড় চালান আনার নেপথ্য কাহিনী ফাঁস হয়েছে। এই সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকটি চালান র‌্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও তার চেয়ে বহুগুণ বেশি চালান ঢুকে পড়েছে দেশের অভ্যন্তরে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার মরিচ্যাঘোনা এলাকার দুই সহোদর ফয়সাল ও সোহেল, রফিক, রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিম এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। 
এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা শত শত কোটি টাকা দুবাইতে পাচার করছেন, এই পাচার করা টাকা দুবাইতে গ্রহণ করতেন মোঃ সোহেল। এই টাকায় সোহেল বিদেশে বিলাসবহুল গাড়ী, বাড়ি, মার্কেটসহ বহুতল ভবন নির্মাণ, ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করছেন। এছাড়াও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশেও নানা সম্পদ ও ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন বলে তথ্য রয়েছে। একই এলাকার বিকাশ নামধারী হুন্ডি ব্যবসায়ী রফিকের মাধ্যমে দুবাইতে কোটি কোটি টাকা পাচার ছাড়া সরাসরি ইয়াবার চালান দুবাই নিয়ে খালাস করে বেশ কয়েকবার। ফয়সালের অপর ভাই সোহেল স্বপরিবারে বর্তমানে দুবাইতে অবস্থান করে। 


তবুও এসপি কার স্বার্থে বহাল?

সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহাকে গুলি করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর আলোচনায় আসে ওসি প্রদীপ দাশের অন্ধকার জগতের তথ্য। ক্রসফায়ার ‘বাণিজ্য’ ও মাদক ব্যবসায় মদত দেয়ার মাধ্যমে টাকা কামানোর নেশায় পরিণত হয়েছিল প্রদীপের। কিন্তু তিনি কী একাই এই কাজ করেছেন? না। তার সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনও।
ওসি প্রদীপ বা লিয়াকতের মতো কয়েকজনের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ এলেও তাদের বিরুদ্ধে বড় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা পুলিশ। অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সীমাবদ্ধ থাকতো কক্সবাজারের এক থানা থেকে অন্য থানায় বদলি করার মাঝেই। তাদের কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সায় ছিল এসপি’র।

এসপি’র স্ত্রী জেনিফার মুনের নামে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়া ছাড়াও নামে-বেনামে বহু সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে একটি সংস্থার প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে।
বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জের দক্ষিণ ওলানিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের আব্দুল কাদের হাওলাদার ও অজুফা খাতুনের ছেলে এবিএম মাসুদ হোসেন ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেননি। শিবিরের একজন নেতার মাধ্যমে তিনি ইসলামী ব্যাংকে চাকরি নিয়েছিলেন বলে তথ্য রয়েছে। জোট সরকারের আমলে ২৪তম বিসিএসে এএসপি হিসেবে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শ্বশুরের পরিচয়ে তিনি সুবিধা নেন বলে গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য পেয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধান ও স্থানীয়দের ভাষ্যে উঠে এসেছে এসপি মাসুদের নানা অনিয়মের তথ্য। মূলত তার আশকারায় ওসি প্রদীপসহ একাধিক সদস্য বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন দিনের পর দিন। কক্সবাজারে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে দুর্নীতি, টাকার বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয়া, বড় মাদক ব্যবসায়ীদের না ধরে চুনোপুঁটিদের ধরা, ক্রসফায়ার বাণিজ্য, অভিজাত হোটেল থেকে চাঁদা আদায় ও সংশ্লিষ্ট জেলার জামায়াত নেতাদের পুনর্বাসনের অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠছে, সিনহা হত্যাকাণ্ডে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের ভূমিকা নিয়েও।

Tuesday, August 25, 2020

মেজর সিনহা হত্যা: কত কিছুই যে অজানা





সাইদুর রহমান রিমন:টেকনাফ মডেল থানার গায়েব হওয়া সিসিটিভি'র ফুটেজ যে ওসি প্রদীপের সহযোগিদের কাছেই লুকিয়ে রাখা আছে তার প্রমান মিলেছে। গত ২৩ আগস্ট বিভিন্ন ইউটিউব ও একাধিক চ্যানেলে সিফাতের বক্তব্য হিসেবে যে ভিডিওটি চালানো হয়েছে সেই ভিডিওটুকু টেকনাফ থানার সিসিটিভি ফুটেজেরই এডিট করা অংশ। প্রদীপ চক্রের সহযোগী যেসব পুলিশ সদস্য সিফাতের প্রায় ১১ মিনিটের দীর্ঘ ভিডিও বক্তব্য বাজারে ছেড়েছে তাদের হাতেই রয়েছে থানার গায়েব হওয়া ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভির হার্ডড্রাইভ।

ঘটনার রাতে মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের পরক্ষণেই সিফাতকে পিছমোড়া করে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে আসামি হিসেবে টেকনাফ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভীতসন্ত্রস্ত, বিধ্বস্ত সিফাতকে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এর কক্ষে নিয়েই তিন পুলিশ কর্মকর্তা একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়তে থাকেন। সিফাত তখন মেজর সিনহা হত্যাকান্ডসহ তিন মামলার আসামি হিসেবে অনিশ্চিত ভয়াবহতার মুখোমুখি, ভবিষ্যত তার গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। কোনো কোনো চ্যানেল ও ইউটিউবে তার হ্যান্ডকাপ লাগানো অংশটুকু হাইড করে ভিডিও বক্তব্য প্রচার করেছে। প্রদীপের ভক্ত সহযোগিদের হাতে গ্রেফতার থাকাবস্থায় সিফাতকে দিয়ে যা কিছু বলানো হয়েছে তার প্রতি হঠাৎ এতোটা বিশ্বাস জন্মানোর কারণ কী-এমন প্রশ্ন তুললেও কারো ক্ষোভের কারণ দেখি না।

উল্লেখ্য, অভিযোগ উঠেছে গত ১২ আগস্ট গভীর রাতে এএসআই সুজিত ও কং সাগরের মাধ্যমে থানা সিসিটিভির হার্ডডিস্কটি খুলিয়ে চুমকির লাগেজে ভরা হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি পরদিন ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার চুমকি তার সবকিছু গুছিয়ে টেকনাফ থানার বাংলো ছেড়ে তার চট্টগ্রামের বাসায় চলে যান। এখন সেই হার্ডড্রাইভ খুঁজে সিফাতের আদায় করা বক্তব্যের একাংশ এডিট করে বাজারে ছাড়া হয়েছে। প্রদীপ চক্রের সহযোগিরা সবাই শুধু 'মেজর সিনহার হত্যাকান্ড পরিকল্পিত' সংক্রান্ত যাবতীয় প্রমানাদি ধামাচাপা দেয়ার কাজেই বেশি ব্যস্ত। তারই অংশ হিসেবে থানার সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে।



এসপি মাসুদেই প্রশ্নবিদ্ধ সরকারের সদিচ্ছা

শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) সিনহা রাশেদের নির্মম হত্যাকান্ডের পর যতই দিন গড়াচ্ছে দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতার পাল্লা ততই যেন ভারি হচ্ছে। তদন্ত ক্ষেত্রেও নানা ফাঁক ফোকর চোখে পড়ছে। সকল ক্ষেত্রেই চলছে অভিযুক্ত এসপি এবিএম মাসুদের নগ্ন হস্তক্ষেপ। তারই তত্বাবধানে সুপরিকল্পিত ভাবে একের পর এক আলামত বিনষ্ট করা হচ্ছে। মূলত: এক এসপি'র কারণেই মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচণ ও কঠোর বিচারের ব্যাপারে সরকারের সদিচ্ছা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। গোটা সরকারকে বিতর্কিত করে এসপিকে বহাল রাখার মাধ্যমে কার স্বার্থ হাসিল হচ্ছে- তা নিয়ে সকল মহলেই চলছে নানা গুঞ্জন।
এদিকে মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যার গুরুত্বপূর্ণ আলামত টেকনাফ মডেল থানার সিসিটিভির ফুটেজ সরিয়ে ফেলা এবং র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত আসামি নুরুল আমিনের মাকে বাদী সাজিয়ে 'ছেলে অপহরণের' অহেতুক মামলা রুজু করার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে ওসি মোঃ আবুল ফয়সল’কে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওসি হিসেবে যোগদানের মাত্র ১১ দিনের মাথায় গত ২০ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে মোঃ আবুল ফয়সালের চাকুরী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (APBn-এপিবিএন) এ সংযুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে টেকনাফ মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এবিএমএস দোহাকে নতুন ওসি নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ওসি’র দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধী আবুল ফয়সালই টেকনাফ থানায় ওসির চেয়ার দখল করে আছেন। বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমারের অসমাপ্ত কর্মকান্ড সম্পাদনেই তিনি বেশি ব্যস্ত থাকছেন। পাশাপাশি নানা ফন্দিফিকিরে সিনহা হত্যা মামলার তদন্তে দীর্ঘসূত্রিতার জটিলতা বাধাচ্ছেন।



হত্যার মোটিভ নির্ধারণের আলামত মেলেনি

মেজর সিনহা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম গত ১৮ আগস্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে টেকনাফ মডেল থানার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে যান। কিন্তু আইও তাঁর তদন্ত কাজের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় মনে করা সেই সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারেননি। টেকনাফ মডেল থানার বিদায়ী ওসি মোঃ আবুল ফয়সল আইও মোহাম্মদ খায়রুল ইসলামকে জানালেন-সিসিটিভি’র রেকডিং নষ্ট থাকায় সিসিটিভি’র ফুটেজ দেওয়া যাচ্ছেনা। ‘সিসিটিভি’র রেকডিং নষ্ট থাকায় সিসিটিভি’র ফুটেজ দেওয়া সম্ভব হয়নি’ মর্মে লিখিত নিয়ে মামলার আইও র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম টেকনাফ মডেল থানা থেকে নিরাশ হয়ে ফেরত আসেন। সবাই অবাক হন, টেকনাফ থানা একটি মডেল থানা হওয়া সত্বেও কেন সিসিটিভি’র রেকডিং নষ্ট ছিলো! সবার ধারণা, সিসিটিভি ফুটেজে সিনহা হত্যা সংক্রান্ত স্পর্শকাতর বিষয় থাকায় তা মূলত সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিসিটিভি’র ফুটেজ না পাওয়ার বিষয়টি এরইমধ্যে তাঁর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও আদালতকে অবহিত করেছেন।



অপরের অস্ত্রে লিয়াকতের গুলি

সিনহার ওপর যে অস্ত্র দিয়ে গুলী করা হয়েছে সেটা কার? তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন এই মামলার অন্যতম আসামী এবং পুলিশের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নন্দ দুলাল দাবি করেছেন ইনস্পেক্টর লিয়াকত তার অস্ত্রটি নিয়ে সিনহার ওপর ৪টি গুলী করেছেন। অজ্ঞাত কারণে লিয়াকত তার নিজের অস্ত্র দিয়ে গুলী করেননি। তবে নিয়ম অনুযায়ী যার জন্য অস্ত্র বরাদ্দ তিনিই সেটা ব্যবহার করতে পারেন। ৩১ জুলাই মেজর সিনহা হত্যাকান্ডে এই ব্যত্যয়টি কেন ঘটেছে সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিনিয়র এএসপি খাইরুল ইসলাম পুলিশ লাইন্সে গিয়ে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি সংগ্রহ করেছেন। অস্ত্রটির ব্যালেস্টিক রিপোর্টের জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।



গাজা দেয় বাবুল, বাবা জহিরুল

৩১ আগস্ট রাতে ইন্সপেক্টর লিয়াকতের গুলিতে মেজর সিনহা যখন রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তেই শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ক্যাশিয়ার খ্যাত আব্দুল্লাহ আল মামুন ছোটাছুটিতে ভীষণ ব্যস্ত ছিলেন। তিনি একবার ফাঁড়িতে ঢুকেন আরেকবার ছুটে যান পাশের শামলাপুর বাজারে। কিছু সময়ের মধ্যেই শামলাপুর বাজারের সেলুন দোকানি বাবুল দৌড়ে এসে টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে কিছু পরিমাণ গাজা পৌঁছে দিয়ে যায় আব্দুল্লাহ আল মামুনের হাতে। ছুটে আসে স্থানীয় ইয়াবা বিক্রেতা জহিরুল। সেও মামুনের হাতে ৫০টি ইয়াবার একটি প্লাস্টিক প্যাকেট পৌঁছে দেয়। ক্যাশিয়ার মামুন এসব মাদক ইন্স‌পেক্টর লিয়াকতের হাতে পৌঁছে দিলে লিয়াকত তা মেজর সিনহার গাড়ির ভিতরে রেখে দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি ওসি প্রদীপকে জানিয়ে 'মেজর সিনহার কাছ থেকে ইয়াবা ও গাজা পাওয়া গেল' মর্মে জব্দ তালিকায় লিপিবদ্ধ করে।

মেজর সিনহাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পরও তার ললাটে মাদকাসক্ত'র কালিমা লেপনের অপচেষ্টায় অংশ নেয়া বাবুল ও জহিরুলের অপরাধ এখনো আমলে নেননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাদেরকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের বাইরেই রাখা হয়েছে, এমনকি সাক্ষী হিসেবেও তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। একইভাবে ঘটনার পরেই একটি মাইক্রোবাস ও একটি পিকআপযোগে প্রদীপের সহযোগী হিসেবে যারা উর্দ্ধশ্বাসে ঘটনাস্থলে হাজির হন তাদের কারো খোঁজ পাননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। থানার নির্ভরযোগ্য সূত্রটি জানায়, ওই রাতে ওসি প্রদীপের সঙ্গী হিসেবে এসআই সজীব, এসআই মিথুন ভৌমিক ও জনৈক কনস্টেবল ছিলেন। তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার খবর পেয়েই এসপি এবিএম মাসুদ ওই তিন পুলিশ সদস্যকে তাৎক্ষণিকভাবে টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করেন বলেও জানা গেছে।

Saturday, August 22, 2020

মেজর সিনহা হত্যা : পুলিশের সহায়তায় থানা'র সিসিটিভি হার্ডডিস্ক নিয়ে গেছে চুমকি

সাইদুর রহমান রিমন : এ কয়দিন যারা পাহাড়সম জ্ঞ্যান নিয়েও বুদ্ধিহীনতার দক্ষতায় আমার রিপোর্টকে মিথ্যা প্রমানের ঠিকাদারী নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন-আজ তারাও দেখি টেকনাফ থানার সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবের ঘটনায় বেশুমার উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। আপনারা তো গলা ফাটিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছিলেন, মেজর (অব.) সিনহা ঘটনার দিন ইনানীর নীলিমা রিসোর্ট থেকে বাহারছড়া সংলগ্ন মারিসবুনিয়া পাহাড়ে গেছেন, আর সেখান থেকে ফেরার সময়ই এসআই লিয়াকতের অতর্কিত গুলিতে মারা গেছেন। তাহলে টেকনাফ থানার ফুটেজ খুঁজেন কেন?

হ্যা, মেজর সিনহার হত্যা রহস্য যে থানার সিসিটিভি ফুটেজেই লুকিয়ে আছে সেই বোধটা এতদিনে জাগ্রত হয়েছে? বিশাল বপু টাইপের সাংবাদিক নামধারী কতিপয় মূর্খ দালাল ৩১ জুলাই কী ঘটেছিল তা জানতে রিসোর্টে ঘুমন্ত সিপ্রা দেবনাথের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন। যমুনার আরেক বাচ্চা গাধা রিসোর্টের আরেক রুমে বেঘোরে ঘুমানো তাহসীনের বক্তব্য নিয়েই বলে উঠে, না, না মেজর ইয়াবা সংক্রান্ত কোনো কাজে গিয়েছিলেন না, তিনি টাইম ল্যাপস এর ভিডিও করতে পাহাড়ে উঠেছিলেন। অন্ধ মনিরুলদের একবারও মনে প্রশ্ন জাগে না যে, মেজরের সঙ্গে সেদিন শুধু সিফাত ছিলেন। ওইদিনের বিষয়ে সিপ্রা-তাহসীন কিছুই জানেন না। অথচ বিডি নিউজ, যমুনা টিভিসহ কয়েকটি মিডিয়ার ভারিক্কি মার্কার সাংবাদিক ‌'অপ্রয়োজনীয় দু'জনের বক্তব্য' প্রকাশ করতে পেরেই কী আনন্দে গদগদ হয়ে উঠলেন? এখন কী একটুও লজ্জা লাগছে না? প্রতিবন্ধী স্টাইলের বুদ্ধি নিয়ে আবার টাইম ল্যাপস ভিডিও কী সেই জ্ঞ্যাণ বিতরণেরও পাঁয়তারা চালালেন? আপনার টাইম ল্যাপস যে প্রকৃত তথ্যসূত্র সিফাত পর্যন্তই যেতে পারে না-এটা কী টের পেয়েছেন? আপনার টাইম ল্যাপস ভিডিও'র শিক্ষা যে ২২ কিলোমিটার দূরের টেকনাফ থানায় মেজরের যাওয়ার কথাটা ভাবতে পর্যন্ত পারে না-তা নিজে নিজেই গুলিয়ে খেয়ে ফেলেন। তাতে পেটটা ভরা থাকলে ফালতু কথা বলতে মন চাইবে না। আপনাদের মার্কারই আরেক গুরু সাংবাদিক তো ইলিয়াস কোবরাতেই ডুবে রইলেন। তার কাছে জাতির মেধাবী দক্ষতাপূর্ণ এক সন্তান মেজর মারা যাওয়াটা কোনো বিষয় না, কিন্তু মেজরের মৃত্যুকালীন ছটফটানিতে কোবরার গায়ে কোনো ধুলা লাগলো কি না-তা পরিস্কার করার কর্মেই নিজেকে উজাড় করে দিলেন!


বুদ্ধিহীন, পাগল-ছাগল নানা কথাই বলতে পারে সেসব শুনলে তো আর আমাদের চলবে না। আমরা রাষ্ট্র ও জাতির প্রতি সুনির্দ্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের অঙ্গিকার করেই ক্ষুদে রিপোর্টারের কর্তব্য পালনের চেষ্টা করে থাকি। তাই আগে রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই-তারপর অন্য কিছু ভাবি। এরপরও জ্ঞ্যান স্বল্পতায় কত শত ভুল করি, সেটা বুঝে নিজে নিজেই লজ্জা পাই, সংশোধিত হবার চেষ্টা করি।


সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারে গাফিলতি

হার্ড ড্রাইভ নিয়ে গেছে চুমকি
মেজর সিনহার হত্যাকান্ডটি স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, এ কারণে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। হত্যা মামলার অগ্রগতি বিষয়েও নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন। গত ৯ আগস্ট আমার প্রতিবেদনে ফলাও করে তোলা হয়েছে যে, মেজর সিনহা টেকনাফ থানায় গিয়ে ওসি প্রদীপের ইয়াবা সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-আর এটাই মেজরের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এ বিষয়ের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে এবং নানা বিতর্ক ছড়িয়ে দেয়ার বিপরীতে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলাম থানার সিসিটিভি ফুটেজে তা প্রমানিত হবে। তারপরও দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ থানার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ বা সংগ্রহ করে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা নিলেন না কেন?


ওসি প্রদীপ এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হন, পরে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে যান। কিন্তু প্রদীপের সব সম্পদের মালিক, অপরাধের দোসর তারই স্ত্রী চুমকি কিন্তু টেকনাফ থানা কম্পাউন্ডে ওসির বাংলোতেই অবস্থান করছিলেন। তার আয়েশের জন্য সরকারি এ বাংলোটির দেয়াল ভেঙ্গে কয়দিন আগেই দামি এয়ারকন্ডিশনার বসানো হয়েছে, আছে পানি ঠান্ডা গরমের মেশিন ব্যবস্থা। ওসি প্রদীপ জেলে থাকলেও চুমকির সার্বক্ষণিক সেবাদানের জন্য এএসআই সুজীত ও কনস্টেবল সাগরসহ চার জন পুলিশ সদস্য তার আশপাশেই ঘুরঘুর করেন। কারো পরামর্শ অনুযায়ী গত ১২ আগস্ট রাতে এএসআই সুজিত ও সাগরের মাধ্যমে থানা সিসিটিভির হার্ডডিস্কটি খুলিয়ে চুমকির লাগেজে ভরা হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি পরদিন ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার চুমকি তার সবকিছু গুছিয়ে টেকনাফ থানার বাংলো ছেড়ে তার চট্টগ্রামের বাসায় চলে যান। সঙ্গত কারণেই ১৭ আগস্ট থেকে খোঁজাখুঁজি করে সিসিটিভি'র ফুটেজ সংবলিত হার্ডডিস্কটা আর পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অথচ সেখানেই রয়েছে হত্যাকান্ডের আসল মোটিভের সচিত্র প্রমাণ।

Sunday, March 29, 2020

সৌদি আরবের একাধিক শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা



করোনা আতঙ্কের মধ্যেই সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদসহ একাধিক শহরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। এতে দুই বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটি।



করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থামাতে পুরো দেশে তিন সপ্তাহের কারফিউ জারি করেছে সৌদি সরকার। এরই মধ্যে শনিবার রাতে এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। খবর ডনের।

হামলার জন্য ইয়েমেনের হুতিদের দায়ী করে সৌদি সরকার জানিয়েছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ধ্বংস করেছে। রিয়াদ ও ইয়েমেন সংলগ্ন শহর লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়।

এর আগেও হুতি অসংখ্যবার সৌদির অভ্যন্তরে ড্রোন, রকেট ও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

তবে গত সেপ্টেম্বর থেকে এসব হামলা থেকে দূরে ছিল সংগঠনটি। গত বছর সৌদি আরবের তেলক্ষেত্রে ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালায় হুতি। এতে দেশটির তেল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছিল। এরপর থেকেই আর বড় কোনো হামলা চালায়নি হুতিরা।

শনিবারের হামলা নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের সরকারি বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ)।

এতে বলা হয়, রাজধানী রিয়াদ ও জিজান শহরকে লক্ষ্য করে দুটি ব্যালিস্টিক মিসাইল হামলা হয়েছে। তবে এগুলোকে সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। এর ধ্বংসাবশেষ থেকে দুই বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছেন। তবে হুতিদের পক্ষ থেকে এখনো দায় স্বীকার করা হয়নি।