ফ্ল্যাটে ওঠার বাকি ছিল আর মাত্র কয়েকদিন। এসি, ফ্রিজসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র ফ্ল্যাটে তুলেছেন। সব সাজানো। তবে দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ফ্ল্যাটটিকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন আশিষ চক্রবর্তী। তিনি পেমেন্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এসএসএল ওয়্যারলেসের (সফটওয়্যার শপ লিমিটেড) ডিরেক্টর ও চিফ অপারেটিং অফিসার।
শুক্রবার (২০ মার্চ) সকালে যখন করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপনে সরকারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এলাকাবাসী, তখন নিজের ফেসবুক ওয়ালে এই পোস্টটি দেন আশিষ।
তার পোস্টটি হু বুহু তুলে ধরা হলো :
তার পোস্টটি হু বুহু তুলে ধরা হলো :
‘আমার মায়ের অবসরের টাকায় এবং আমার যৌথ উদ্যোগে উত্তরা দিয়াবাড়ীতে রাজউকের একটা (এবং একমাত্র) ফ্লাট আছে। দুই সপ্তাহ আগেই এসি, ফ্রিজসহ বেশ কিছু জিনিস কিনেছি। সব সাজনোই আছে। আমার ফ্ল্যাটের চাবি আমি নিজেই সেচ্ছায় দিয়ে দিয়েছি (কেউ এখনো চায়নি)। কোনো কিছুই আনি নাই। আমি জানি না সরকার এটা ব্যাবহার করবেন কি-না? কিন্তু আমাদের সামান্য ত্যাগ যদি এই সময় কারো কাজে আসে আমি তাতেই খুশি। এখন সময় আমাদের বলার, আমার আমার করার না।’
এই পোস্টের এরপর থেকেই প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। তার পোস্টটিতে লাইক পড়েছে ১০ হাজার। প্রায় ১ হাজার কমেন্ট ও ১৪০০ শেয়ার হয়েছে পোস্টটি। এতে কমেন্টে অনেকেই নিজেদের ঘরের ফ্ল্যাট সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে সেখানে প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) রাত থেকে করোনাভাইরাসে সন্দেহভাজনদের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টর এলাকার দিয়াবাড়িতে রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ভবনে সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কুঞ্জলতা নামের ওই কম্পাউন্ডের ৪টি ভবনের মোট ৩৩৬টি ফ্ল্যাট কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শুক্রবার সকালে প্রতিবাদ করেছে দিয়াবাড়ির স্থানীয়রা। কোয়ারেন্টাইন স্থাপনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী বলছেন, আবাসিক এলাকায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার স্থাপনের সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। এর ফলে এখানে বসবাসরত প্রায় ৩ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়বেন। তারা সড়কে বসে সড়ক অবরোধ করেন।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারি। এতে সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১০ হাজার ৪৮ জন। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৮ হাজার ৪৩৭ জন।
বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। এরপর দিনে দিনে এ ভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২০ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন একজন।
আইইডিসিআর বাংলাদেশে সংক্রমণের যে তথ্য দিচ্ছে, এতে দেখা যাচ্ছে, প্রবাসফেরত বা তাদের সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিরা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু অনেক প্রবাসফেরতকেই কোয়ারেন্টাইনে রাখা যাচ্ছে না। আশকোনায় হজক্যাম্পে এ নিয়ে হট্টগোলও বেঁধেছিল।
এই পরিস্থিতিতে সন্দেহভাজনদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার দায়িত্ব দেয়া হয় সেনাবাহিনীকে। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তৃতির সম্ভাব্যতা এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুইটি কোয়ারেন্টাইনের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। সেগুলো হলো- বিমানবন্দর সংলগ্ন হজক্যাম্প এবং উত্তরার দিয়াবাড়ি সংলগ্ন রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট কোয়ারেন্টাইন।
এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গকে বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় ইমিগ্রেশন শেষে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।
No comments:
Post a Comment