বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরইমধ্যে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। চীনের উহান থেকে সাপ ও বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়িয়েছে এ মহামারি রোগটি।
করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার না হলেও এটি প্রতিরোধের উপায় জানিয়েছেন চীনের বেনজিং মিলিটারি হাসপাতালের সিইও প্রফেসর চেন হরেন। তার মতে, করোনা থেকে বাঁচাতে পারে এক টুকরা লেবু আর এক কাপ গরম পানি। এক্ষেত্রে একটি লেবু টুকরা করে কেটে য়ে এক কাপ গরম পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে। এই লেবুর পানীয়তে থাকা প্রলিফেরাশন শরীরকে যে কোনো ধরনের ভাইরাস থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
এক টুকরা লেবুতেই ধ্বংস হবে করোনাভাইরাস: জানালেন বিজ্ঞানী
প্রতিদিন এই পানীয় পান করার পরামর্শ দিয়েছেন এই গবেষক। তিনি জানান, লেবুর এই পানীয়টি করোনা প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করবে। এছাড়াও এটি শরীরের অন্যান্য ভাইরাস এবং ফ্লুর বিরুদ্ধেও লড়াই করতে সহায়তা করবে। লেবুর রসে রয়েছে কার্বলিক এসিড। যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, শরীরে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সহায়তা করে।
সম্প্রতি চীনের জানজান ইউনিভার্সিটির মেডিকেল সাইন্স বিভাগের গবেষক জিয়াও সেনমি মিনজি বলেছেন, করোনাভাইরাস বিশ্বের সব দেশেই ছড়িয়ে পরবে। সেটা আগে বা পরে। অনেক দেশেই এর কোনো পরীক্ষা করার যন্ত্র নেই। করোনা প্রতিরোধে ভিটামিন সি বেশি করে খেতে হবে। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মূলত সাধারণ একটি ভাইরাস। যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। দূর্ভাগ্যবশত এখনো করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি। তবে করোনা সাধারণত অন্যান্য রোগে ভুগছেন এমন মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করে বেশি। করোনাভাইরাস মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যেই সংক্রমণ ঘটায়।
করোনাভাইরাস যেভাবে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেইপ্রদেশের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাস উৎপত্তিতে প্রথম জানতে পারে বিশ্ব। ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এখন সারা বিশ্বে মহামারী রূপ নিয়েছে। অনেক মানুষ এই রোগে মারা যাচ্ছেন।
তবে আমরা অনেকেই জানি না যে এই ভাইরাস কীভাবে শরীরে আক্রমণ করে আর কেনইবা মানুষের মৃত্যু হয়। ইনকিউবেশন বা প্রাথমিক লালনকাল
এ সময় ভাইরাসটি নিজেকে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত করে। শরীর গঠন করা কোষগুলোর ভেতরে প্রবেশ করে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার মাধ্যমে কাজ করে ভাইরাস।
করোনাভাইরাস, যার আনুষ্ঠানিক নাম সার্স-সিওভি-২। এই ভাইরাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে আপনার দেহে প্রবেশ করতে পারে। এ ছাড়া আশপাশে কেউ হাঁচি বা কাশি দিলে বা ভাইরাস
সংক্রমিত কোনো জায়গায় হাত দেয়ার পর আপনার মুখে হাত দিলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।
সংক্রমিত কোনো জায়গায় হাত দেয়ার পর আপনার মুখে হাত দিলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।
শুরুতে এটি আপনার গলা, শ্বাসনালি ও ফুসফুসের কোষে আঘাত করে। এসব জায়গায় করোনার কারখানা তৈরি করে। পরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে দেয় এবং আরও কোষকে আক্রান্ত করে।
ইনকিউবেশনের সময়ে প্রথম সংক্রমণ ও উপসর্গ দেখা দেয়ার মধ্যবর্তী সময় স্থায়িত্ব একেকজনের জন্য একেকরকম হয়। তবে গড়ে তা পাঁচ দিন।
উপসর্গ
১০ জনের মধ্যে আটজন মানুষের জন্যই কোভিড-১৯ একটি নিরীহ সংক্রমণ। আর এর প্রধান উপসর্গ কাশি ও জ্বর।
শরীরে ব্যথা, গলাব্যথা এবং মাথাব্যথাও হতে পারে। তবে উপসর্গ দেখা দেবেই এমন নয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ায় প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করার ফলে গায়ে জ্বর আসে।
প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসের কারণে শুষ্ক কাশি হয়। কোষগুলো ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার কারণে অস্বস্তিতে পড়ার কারণে সম্ভবত শুকনো কাশি হয়ে থাকে। তবে অনেকের কাশির সঙ্গেই একটা পর্যায়ে থুতু বা কফ বের হওয়া শুরু করবে, যার মধ্যে ভাইরাসের প্রভাবে মৃত ফুসফুসের কোষগুলোও থাকবে।
এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম, প্রচুর তরল পান করা এবং প্যারাসিটামল খাওয়ার উপদেশ দেয়া হয়ে থাকে। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতাল বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন নেই। এ অবস্থায় এক সপ্তাহের মধ্যে মানুষ সুস্থ হয়ে যায়।
তবে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে কোভিড ১৯-এর আরও ক্ষতিকর একটি সংস্করণ তৈরি হয়। এই রোগ সম্পর্কে হওয়া নতুন গবেষণায় ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে যে রোগটির এই ধাপে আক্রান্তদের সর্দিও লাগতে পারে।
ভয়াবহ ব্যাধি
এই ধাপের পর যদি রোগ অব্যাহত থাকে, তা হবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসটি সম্পর্কে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল হওয়ায়। যেই কেমিক্যালগুলো শরীরে বার্তা পাঠাতে থাকে, সেগুলোর প্রতিক্রিয়া তখন শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রদাহ হয়।
লন্ডনের কিংস কলেজের ড. নাথালি ম্যাকডরমেট বলেন, ভাইরাসটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
অতিজটিল রোগ
এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে যে, প্রায় ৬ শতাংশ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ অতিজটিল পর্যায়ে যায়। এই ধাপে শরীর স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে অক্ষম হয় এবং মৃত্যুর বড় ধরনের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
মূল সমস্যাটা হয়, এই ধাপে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করে এবং সারা শরীরেই বিভিন্ন রকম ক্ষতি তৈরি করে।
রক্তচাপ যখন মারাত্মকভাবে নেমে যায়, তখন এই ধাপে সেপটিক শক পেতে পারেন আক্রান্ত ব্যক্তি। এমনকি তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।
আর শ্বাস-প্রশ্বাসে তীব্র সমস্যা হওয়ার উপসর্গ দেখা দেয় ফুসফুসে প্রদাহ ছড়িয়ে পড়লে। কারণ সেই সময় শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট অক্সিজেন পুরো শরীরে প্রবাহিত হতে পারে না। এর ফলে কিডনি রক্ত পরিশোধন ছেড়ে দিতে পারে এবং অন্ত্রের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
No comments:
Post a Comment